“তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে এসো, আমরা তোমার অপেক্ষা করছি”, নয়না তার স্বামীকে বলল | প্রত্যয় তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে মাথা নাড়ল। তাদের সদ্যজাত কন্যাটির হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে সে আরেকবার হাত নাড়ল ও তারপর ভিডিও কলটা কেটে দিলো |

অন্যদিনের মত প্রত্যয় আজ কলটা কেটেই আন্দোলন মঞ্চের দিকে পা বাড়াতে পারল না, রাস্তার ওপারে সূর্যাস্তের আকাশটা দেখে বরং কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়াল | আজকের দিনটার জন্য ও আর নয়না প্রায় এক বছর ধরে অপেক্ষা করেছিল | কিন্তু, আজ সে তার স্ত্রী এবং সদ্যজাত কন্যার কাছে থাকতে পারছে না | একমাসের বেশি হয়ে গেল সে থিয়েটারে যাওয়ার সময় পায়নি। কিন্তু আজ থিয়েটার মঞ্চের চোখ ধাঁধানো আলোও তার কাছে ভীষণ ফিকে মনে হচ্ছে। জীবনের সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে বাস্তব রঙ্গমঞ্চে দাঁড়িয়ে সে উপলব্ধি করল, আজ সে সুদক্ষ অভিনেতা প্রত্যয় বসু নয়, আজ তার পরিচয়, আন্দোলনকারী ডাক্তারদের অন্যতম মুখ, ডাক্তার প্রত্যয় বসু ।

সূর্যাস্তের আকাশে অগুনতি রঙের খেলা দেখে প্রত্যয়ের মনের আগুনটা কি কিছুটা হলেও স্তিমিত হয়ে পড়ল? “আর কতদিন এভাবে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, দাদা?” “আর কবে আমরা বিচার পাবো?” “আর কতটা ধৈর্যপরীক্ষা দিতে হবে আমাদের?” ভাই বোন গুলোর প্রশ্ন শুনে তার মনের ভিতরের আগুনের ফুলকি আবার নতুন করে গর্জে উঠল। “যতদিন না বিচার পাই, রাজপথেই হবে ঠাঁই”, এই মন্ত্রে দীক্ষিত মানুষগুলোর জন্য প্রত্যয় আরও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে উঠলো। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে সে প্রশ্ন করল, “তোরা সবাই বাঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ পড়েছিস তো? সন্ন্যাসী বিপ্লাবীরা কতদিন ধরে তাদের লক্ষ্য স্থির রেখে লড়াই চালিয়ে গেছিলেন বলত? আমরাও তো এক বিপ্লবের আশায় দিন গুনছি | একটা নতুন ভোরের অপেক্ষায়, কত দিন, কত রাত রাস্তায় থেকে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাটাচ্ছি | চল না, আরেকটু অপেক্ষা করি? দেখিই না, বিদ্রোহ শেষে, রাত পেরিয়ে যখন ভোর আসে, সেটা কেমন দেখতে হয়?”

বিদায়বেলার সূর্যের কাছ থেকে এক নতুন আগামীর আহ্বান পেয়ে প্রত্যয় সবাইকে নিয়ে ফিরে গেল প্রতিবাদ মঞ্চে | লড়াই যে এখনও অনেক বাকি |

(This tale is inspired by Dr. Kinjal Nanda and Dr. Namrata Bhattacharya. This is dedicated to all the protesting doctors demanding #JusticeForAbhaya)

Swarnali Nath Avatar

Published by

Leave a comment