ঈশ্বর কি?

একটা বিশ্বাস, যাঁর কাছে প্রতিনিয়ত মাথা নোয়াতে হয়। হ্যাঁ, হয়। যারা ভাবেন ঈশ্বর নেই, তারাও যেমন ঠিক, আবার ভুল, অপরপক্ষে, যারা ভাবেন ঈশ্বর আছেন, তারাও ঠিক, আবার ভুল। আসলে সব কিছুই তো ওই বিশ্বাসে গিয়েই মেলে শেষ পর্যন্ত। সে তাঁকে তুমি যে নামেই ডাক না কেন, তিনি তোমায় সাড়া দিন বা না দিন, তিনি আছেন। কোথাও একটা আছেন, কোনো একটা রূপে তিনি সেখানে সদা বিরাজ করছেন। ‘সর্বভূতে ঈশ্বর’ যাঁরা খোঁজেন, তারা বিশ্বাস করবেন সবার মধ্যেই ঈশ্বর আছেন।

আবার ঠিক এমনই, যারা বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর বলে কিছু নেই, তারাও ঠিক। না, নেইই তো। থাকলে তিনি কোথায়? দেখা দিন! দিন দেখা! ‘ওহে, তোমার ঈশ্বরকে বোলো, যদি তিনি কোথাও থেকে থাকেন, তাহলে যেন আমায় দেখা দেন’। তুমি চাইলে, ঠিক এভাবেই চাইলে, আর তিনিও তোমায় দেখা দিলো। দিলোই তো, ওই যে, ওই কাগজকুড়োনি মেয়েটা, যে তোমার ফেলে দেয়া কাগজপত্র গুছিয়ে নিজের বস্তায় ভোরে চলে গেলো। ওই যে, ওই ভাঙা হারমোনিয়াম নিয়ে গান গাইতে থাকা বৈষ্ণব দাদু, যে সকাল সকাল তোমায় একটা মধুর মায়াময় আলোয় ভরিয়ে চলে গেলো। ওই তো, ওই খবরের কাগজ বিলি করা ছেলেটা, যে তোমার দরজায় ভোর ভোর এসে সাড়া দেশের তথা সাড়া পৃথিবীর খবর এনে হাজির করে। অথবা, রেল স্টেশনে ভিক্ষা করা সেই বুড়ি পাগলিটা, যে সারাদিন ধরে শুধু বিড়বিড় করে আবোল তাবোল বকতে থাকে কিন্তু তুমি যখন অফিস থেকে ফেরার পথে তার হাতে গুঁজে দাও একটা টাকা, সে ঠিক হাত তুলে তোমায় আশীর্বাদ করে বলে, ‘ভালো থেকো’। আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে, ঈশ্বর তোমার সামনে এসেছিলো ওই লোকটার রূপ ধরে যে তোমার হারিয়ে যাওয়া ব্যাগটা ঠিকভাবে ফেরত দিয়ে গেছিলো, বা তোমায় একটা কঠিন অসুখ থেকে বাঁচিয়েছিলো, বা তুমি যখন নতুন কোনো জায়গায় গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলে, সে তোমায় সঠিক রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলো।

যারা মনে করেন ভগবান আছেন সাকারে, তাইই সত্য। যারা বিশ্বাস করেন ভগবান রয়েছেন নিরাকার সত্তায়, তাইই ঠিক। আবার যারা কঠোরভাবে বিশ্বাস করেন ভগবান নেই, কোত্থাও নেই, তাইই সই। তিনি আছেন, আবার তিনি নেইও। তিনি এই জগতের কোত্থাও নেই, আবার তিনি রয়েছেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি কণায়।

আসলে ঈশ্বর হচ্ছেন একটা উপলব্ধির নাম। তাঁকে কেউবা খোঁজে মানুষের মধ্যে, কেউবা খোঁজে মূর্তিপূজায়, কেউবা তাঁকে খুঁজে বেড়ায় প্রকৃতির উপাসনায়। কেউ তাঁকে অনুভব করে সেবার দ্বারা, কেউবা সাকার আরাধনায়, আবার কেউবা নিরাকার উপাসনায়।

ভগবান তুমি, ভগবান আমি, আবার ভগবান কেউই নয় | কেউ জানে না, আর জানলেও বলবে না | কেনই বা বলবে? তোমার কাছে ঈশ্বর ধরা দেন একরূপে, আমার কাছে তিনি আসেন অন্যরূপে |

ঈশ্বরকে জানতে চাও? জানার আগে মানবে না, তাই তো? আচ্ছা, বেশ, জানতে চেষ্টা করো | জানতে শুরু করো, একদিন ঠিক জানতে পারবে | জানতে চাও না? তাও ভালো; এতে আবার জানার কিই বা আছে | ঈশ্বর যেই হন, যেমনি হন, তাতে আমার কিছু এসে যায়না | বেশ, বেশ, এমত বিশ্বাস নিয়ে যারা রয়েছেন, তারা উপলব্ধি করেননি, তাদের এই অবিশ্বাসও কিন্তু একপ্রকার ‘বিশ্বাস’ | বিশ্বাস ছাড়া কি অবিশ্বাস আসে? তাহলে, ‘ভগবান নেই’, এই অবিশ্বাসেও কিন্তু একপ্রকার ‘বিশ্বাস’ মিশে আছে |

যার কোনো অস্তিত্বই নেই, তার ব্যাপারে আবার বিশ্বাস অবিশ্বাসের কি আছে?

অস্তিত্ব নেই, কারণ তিনি তো সদা বিরাজমান | এই জাগতিক সংসারের সবটাই যখন ‘ফাঁকি’, তাহলে তার অস্তিত্ব মানুষ টের পাবে কি করে?

কারণ অস্তিত্বর নামই তো ঈশ্বর, তাঁকে আবার আলাদা করে চেনা জানার কি আছে?

Swarnali Nath Avatar

Published by

Categories:

Leave a comment